‘নিজের দেশকে স্বাধীন করতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার মতো রেজাউল করিম নামের একজন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মাতৃভূমি কে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবেন, এই পণ করেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে ধরা পরেন পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর হাতে। সবাইকে চোখ-হাত বেধে ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো দূরে কোথাও। চলন্ত ট্রেন থেকে একজন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ফেলে দেয়ার সময় গুলি করা হচ্ছিলো। এরকম সময়ে পালা আসে রেজাউল করিমের। ট্রেনের দরজার কাছাকাছি যখন নিয়ে যাওয়া হয় তাকে তখন বুদ্ধি করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি করার আগেই ট্রেন থেকে লাফ দেন নদীতে এবং প্রানে বেচে যান’।
যুদ্ধ শেষ করে এসে নিজের জীবনের বেচে যাওয়ার গল্প বলেন ছেলে ওয়াহিদ ইবনে রেজার কাছে। তখন থেকেই মনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের একটা চিত্র চিরতরে গেঁথে যায় ছেলে ওয়াহিদ ইবনে রেজার মাঝে।
ওই যে মনের মধ্যে গেঁথে থাকা চিত্র কে দর্শকের সামনে আনার একটা সুপ্ত ইচ্ছে হয়তো ছিলো তখন থেকেই। তাই তো বছর ৫-৬ আগে একটা গল্প মাথায় আসে যার অনুপ্রেরণা তারই মুক্তিযোদ্ধা বাবার জীবনের গল্প থেকে। কিন্তু গল্পের চরিত্র গুলো কেমন হবে তা নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা থেকে যায় তার মধ্যে। কারন আমাদের দেশে নির্মিত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা যদি দেখেন, আমরা বৃহৎ পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নির্মাণ করতে পারি না৷ বড় পরিসরে গল্প বলাটা খুব কঠিন এবং ব্যয়বহুলও৷ তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যখন চলচ্চিত্রগুলো হয় ছোট ছোট গল্প নিয়ে হয়৷ এসব থেকেই ওয়াহিদ ইবনে রেজা তাই আমি চিন্তা করলেন যদি ‘গ্র্যান্ড স্কেলে’ গল্প বলার আর এর জন্য এনিমেশন হবে পারফেক্ট। গল্প বলার জন্যও আবার এই কাজে সে নিজে পারদর্শী বলেও।
চলচিত্রটির গল্প সম্পর্কে ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন “আমি যখন কোনো গল্প নিয়ে চিন্তা করি, তখন সেই গল্পের মধ্যে নিজেকে কল্পনা করি৷ আমি ভাবলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি থাকলে কী করতাম? হয় আমি খুবই ভয় পেয়ে যেতাম অথবা আমি কোনো কিছু না করে বড় বড় কথা বলতাম৷ এই যে দু’টো বিষয় আমার মাথায় আসলো এখান থেকে আমার মাথায় দু’টো চরিত্র আসে৷ একটা চরিত্রের নাম ধ্রুব আর একটা চরিত্রের নাম আক্কু৷ এই দুই চরিত্র বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হবে এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরাও সেটার সাক্ষী হবো৷ আমরা সরাসরি দেখতে পাবো কিংবদন্তি সেই মানুষগুলোকে৷ এখন আমরা চলচ্চিত্র তৈরির জন্য গবেষণা করছি৷ এই যে টাইমলাইনটা, যে রাস্তাটা ধরে এ দুই চরিত্র হাঁটবে, যে ঘটনাগুলো তারা দেখবে, সব তো দেখানো সম্ভব না৷ আমি চেষ্টা করছি, যেসব ঐতিহাসিক চরিত্র আগের কোনো চলচ্চিত্রে দেখানো হয়নি, তাদের কথা তুলে ধরতে৷”
ওয়াহিদ ইবনে রেজা একজন কীর্তিমান বাংলাদেশি। ওয়াহিদ ইবনে রেজা এখন আছেন ক্যানাডার ভ্যানকুভারে৷ বর্তমানে তিনি সনি পিকচার্সের হয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন৷ তিনি ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস, ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা: সিভিল ওয়ার ও ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সী-২, হোটেল ট্রান্সসিল্ভানিয়া-৩ এর মতো বড় সব হলিউড ছবির কারিগরি দলে ছিলেন৷ এতোদিন সারা বিশ্বের মানুষ কে তার কাজ দিয়ে বিনোদন দিয়েছেন। এবার তিনি তার নিজের দেশের জন্মের কথা বলতে এসেছেন তারই প্রিয় এনিমেশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম অ্যানিমেশন ফিল্ম, সার্ভাইভিং ৭১! এর টিজার মুক্তি পেল আজ। ২০২১ সাল, আমাদের স্বাধীনতার ৫০তম বছরে সিনেমাটা মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য তার।
টিজার লিংক: https://bit.ly/2COpJpB